bKash Merchant Account এ পেমেন্ট নিয়ে প্রবলেম এবং তার সমাধান
আমাদের দেশে ই-কমার্স এখনো অনেক আরলি স্টেজ বা বলতে পারেন এই ইন্ডাস্ট্রি এখনো বেবি। আর তাই এতে প্রবলেম এর যেন কোন শেষ নেই। একটি প্রবলেম এর সল্যুশন করবেন তো আরও ৫ টি আগের চাইতে বড় নতুন প্রবলেম এসে হাজির হবে। কিন্তু Online Shop বা ই-কমার্স ব্যাবসা করতে হলে এই সকল প্রবলেম এর সমাধান করেই বিজনেস করতে হবে।
আসুন আজ একটু আলোচনা করি বিকাশ এর মার্চেন্ট একাউন্ট এর পেমেন্ট নিয়ে কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা (দেখতে গেলে অসুবিধার সংখ্যা কম কিন্তু সাইজ বড় 😛 )
✍️ রিলেটেড পোস্টঃ কিভাবে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট করতে হয়?
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর সুবিধাঃ
বাংলাদেশের সকল মোবাইল পেমেন্ট প্ল্যাটফরম এর মধ্যে বিকাশই #১ এবং আপনার বাবসায়িক জন্য bKash Merchant Account ব্যাবহার করে বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারেন তার মধ্যে অন্যতম-
১. ট্রান্সেকশন রেট কম
নরমাল পার্সোনাল একাউন্ট এ ১.৮৫% চার্জ কাটলেও bKash Merchant Account এ এই রেট বেশ কম। সঙ্গত কারনেই আমি রেট উল্লেখ করছিনা কারন এটি আপনার প্রতিষ্ঠানের পার মান্থ ট্রাঞ্জেকশন এমাউন্ট এর উপর নির্ভর করে কম বেশী হতে পারে। তবে ই-ক্যাব মেম্বারদের জন্য এই রেট ১.৫% যা একটি স্ট্যান্ডার্ড রেট ধরে নিতে পারেন।
২. কাস্টমার এর এক্সট্রা কোন টাকা কাটে না
সেন্ড মানি করলে যে ব্যাক্তি সেন্ড করবে তার একাউন্ট থেকে ৫ টাকা কাটে কিন্তু বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এ পেমেন্ট করলে এই ধরনের কোন এক্সট্রা টাকা কাটে না।
৩. আন লিমিটেড ট্রাঞ্জেকশন
আপনি দিনে যত খুশি তত বার এবং যেকোনো এমাউন্ট এর টাকা পেমেন্ট হিসেবে রিসিভ করতে পারেন। এতে কোন দৈনিক কিংবা মাসিক লিমিট নেই।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর অসুবিধাঃ
bKash Merchant Account মুলত বিজনেস বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ডেভেলপ করা হয়েছে। উপরে এর বেশ কিছু কার্যকরী এবং বিজনেস এর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং সুবিধাজনক কিছু পয়েন্ট থাকলেও এরও আছে কিছু লিমিটেশন বা অসুবিধা।
১. এজেন্ট নাম্বার থেকে পেমেন্ট করা যায়না
এটিই সবচাইতে বেশী বড় এবং প্রতিদিনের প্রবলেম। বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে শুধুমাত্র পার্সোনাল একাউন্ট থেকেই পেমেন্ট করা যায়। কোন এজেন্ট বিকাশ নাম্বার থেকে পেমেন্ট করা যায়না। আর এটিই সবচাইতে বড় প্রবলেম- কেননা অনেকেরই যাদের বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট নেই তারা এজেন্ট এর মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফার করে থাকেন। অনেকের পার্সোনাল একাউন্ট থাকলেও থাকেনা ব্যালেঞ্চ। অনেকে আবার জানেনই না কিভাবে পেমেন্ট করতে হয়। বিকাশে টাকা পাঠানো মানেই তাদের কাছে “সেন্ড মানি” অথবা এজেন্ট নাম্বার থেকে “ক্যাশ ইন” পেমেন্ট নামের এই ফাংশনটি অনেকের কাছেই একদম নতুন।
২. টাকা ক্যাশ আউট করা যায়না (!)
ক্যাশ আউট করা যায়না বলতে আপনি চাইলেই পার্সোনাল একাউন্ট এর মত যেকোনো এজেন্ট এর কাছ থেকে বা এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে পারবেন না। মার্চেন্ট একাউন্ট করার সময় আপনাকে অবশ্যই একটি ব্যাংক একাউন্ট ট্যাগ করে দিতে হয় এবং বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এর টাকা অটোমেটিক সপ্তাহের যে কার্যদিবসে ট্রানজেকশন হবে তার পরের কার্যদিবসে ব্যাংক একাউন্ট এ জমা হয়ে যাবে। আপনি চাইলেই বিকাশ একাউন্ট থেকে ইনস্ট্যান্ট টাকা তুলতে পারবেন না।
✍️ রিলেটেড পোস্টঃ বাংলাদেশের সকল S.A Paribahan ব্রাঞ্চ এর লিস্ট!
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট নিয়ে নতুন সমস্যা?
যেহেতু bKash Merchant Account এ এজেন্ট নাম্বার থেকে পেমেন্ট করা যায়না আবার অধিকাংশ কাস্টমার এর পার্সোনাল বিকাশ একাউণ্ট নেই তাই ঘুরে ফিরে তাদের কাছে এজেন্টই ভরসা। একটি কথা আছে “Customer is always right” & “Customer first” তাই তাদের বেটার সার্ভিস দেয়ার জন্য আমরা যারা ই- কমার্স বিজনেস করি তারা একাধিক বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট এর মাধ্যমে এতদিন টাকা নিয়ে থাকলেও গত ১/০২/২০১৭ তারিখ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পার্সোনাল একাউন্ট এ প্রতিদিনের ৫ টি ট্রাঞ্জেকশন এর পরিবর্তে ২ টি করা হয়েছে। তার মানে এখন একটি পার্সোনাল একাউন্টে একদিনে ২ বার টাকা নিতে পারবেন।
ঢাকার বাইরের ই-কমার্স অর্ডার কনফার্মেশন এর জন্য আংশিক কিংবা ফুল পেমেন্ট নেয়ার জন্য বিকাশ সবচাইতে জনপ্রিয় একটি মাধ্যম। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা না পারছি মার্চেন্ট একাউন্ট এ এজেন্ট থেকে পেমেন্ট নিতে না পারছি পার্সোনাল একাউন্ট দিয়ে পেমেন্ট নিয়ে দিনের সব অর্ডার ফুলফিল করতে। এটি ই- কমার্স বিজনেস এ একটি নতুন কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রবলেম।
আপনি যদি এই বিজনেস এ নতুন কিংবা খুব বেশী অর্ডার না থাকে তাহলে হয়ত এখনই এই প্রবলেম আপনি ফেস করছেন না কিন্তু যখন আপনার বিজনেস বড় হবে কিংবা যারা এখন মাঝারি সাইজ এর ই-কমার্স কোম্পানি তারা অলরেডি এই প্রবলেম ফেস করছে।
এই প্রবলেম এর সমাধান কি তাহলে?
আমার মতে এই সমস্যার সমাধান ২ প্রকারে করা সম্ভব-
১. সাময়িক সমাধান
সাময়িক সমাধান হিসেবে একাধিক পার্সোনাল একাউন্টে পেমেন্ট নেয়া একটি সমাধান হতে পারে। এছাড়া আরও ২ টি সাময়িক সমাধান আমার কাছে আছে যার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে মার্চেন্ট একাউন্ট এই পেমেন্ট নেয়া (ছলে, বলে, কৌশলে 😀 ) অনেকের কাছে তা ভালো নাও লাগতে পারে কিন্তু বিজনেস করতে হলে এই ধরনের ডিসিশন মাঝে মাঝে ভালো কাজে দিতে পারে-
a. জরিমানা বা এক্সট্রা চার্জ আরপ করাঃ
খুব বেশী অপারগ না হলে এই অপশন এ যাবার দরকার নেই। কিন্তু যদি আপনার পার্সোনাল একাউন্ট এর লিমিট বাচাতে চান এবং পেমেন্ট বিকাশ এর মার্চেন্ট একাউন্ট এ নিতে চান তাহলে আর কিছু করার থাকে না। এই ক্ষেত্রে ১.৮৫% বা ২% এক্সট্রা চার্জ করতে পারেন যদি সে আপনার পার্সোনাল বিকাশ একাউন্ট এ সেন্ড মানি করতে চায়। এমাউন্ট ছোট হলে হয়তো সেই চার্জ দিতেও রাজি হবে কিন্তু যদি এমাউন্ট বড় হয় তাহলে হয়তো এই মেথড একই সাথে আপনার পার্সোনাল একাউন্ট এর লিমিট বাঁচানোর সাথে সাথে কাস্টমারকে আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টেই পেমেন্ট করতে সাহায্য করবে।
তবে অবশ্যই মনে রাখবেন এই মেথড অ্যাপ্লাই করতে গিয়ে যেন অর্ডারই না কান্সেল হয়ে যায়।
b. পুরস্কারের বা ডিস্কাউন্ট এর মাধ্যমে উৎসাহ দেউয়া
এই অপশনটি সবসময়ই ভালো কাজ দেয়। একটু ডিটেইলস এ বলি- আপনি যদি আপনার কাস্টমার কে বুঝিয়ে বলেন যে পার্সোনাল একাউন্ট এর চাইতে কোম্পানির bKash Merchant Account এ পেমেন্ট করা অনেক বেশী নিরাপদ। এর পর তাকে সেই অফাীটি দিন মানে, তাকে বলুন যে আমাদের মার্চেন্ট একাউন্ট এ পে করলে আপনাকে কোন এক্সট্রা পে করতে হবে না এমনকি সেন্ড মানি করতে যে ৫ টাকা প্রতিবার লাগে সেটিও লাগবেনা। আপনি সম্পূর্ণ ফ্রিতে এবং নিরাপদে পেমেন্ট করতে পারেন।
এক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে একটি উদাহরণ হিসেবে ডিরেক্ট এমাউন্ট নিয়ে কথা বলতে পারেন। যেমন- আপনি যদি ২০০০ টাকা পার্সোনাল একাউন্ট এ সেন্ড মানি করেন সেক্ষেত্রে ১.৮৫% বা ২% এক্সট্রা চার্জ দিতে হবে তার মানে আপনাকে ২০০০+৩৭/৪০= ২০৪০ বা ২০৩৭ টাকা পে করতে হবে। কিন্তু আপনি যদি আমাদের মার্চেন্ট একাউন্ট এ পে করেন সেক্ষেত্রে শুধু মাত্র ২০০০ টাকা পে করলেই হবে।
ব্যাস!! আপনাকে আর কিছু বলতে হবেনা। তার নিজের বিকাশ একাউন্ট না থাকলে দরকার হলে বন্ধুর বা অন্য কারো পার্সোনাল একাউন্ট থেকেই আপনার বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট এ পেমেন্ট করে দেবে।
বিঃ দ্রঃ প্রায় প্রতিটি বিকাশ এজেন্ট এর কাছেই একাধিক পার্সোনাল একাউন্ট থাকে। কাস্টমার কে একটু মনে করে করিয়ে দিলে এই টেকনিক ও ভালো কাজে দেয়।
২. পার্মানেন্ট সমাধান
এবার আসি এই সমস্যার পার্মানেন্ট সমাধানের দিকে। আমাদের দেশে এখনো সবার কাছে বিকাশ একাউন্ট নেই। তাই দরকার হলেই তারা কাছের কোন বিকাশ এর এজেন্ট এর সাহায্য নিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রেই নিজের বিকাশ একাউন্ট থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই টাকা থাকেনা। অনেকে আবার জানেনই না কিভাবে টাকা পাঠাতে হয়। অনেকে টাকা পাঠানো মানেই বুঝেন “সেন্ড মানি” পেমেন্ট তাদের কাছে একেবারেই নতুন। কিছু অনেকেই বলেন এর আগে তো কখনো পেমেন্ট করিনি। সত্যিকার অর্থে সেন্ড মানি করে সবাই অভস্থ এবং সেন্ড মানির প্রসিডিওরও অনেক সহজ। যেখানে bKash Merchant Account এ পেমেন্ট করতে গেলে রেফারেন্স নাম্বার দিতে হয়, কাউন্টার নাম্বার দিতে হয় যা অনেকের কাছেই দুর্বোধ। অনেকে আবার মাঝ পথেই থেমে যান কি না কি হতে চলেছে, সব টাকা যদি কেটে নিয়ে যায় এমন সব ভয়ে।
এই সব সমস্যার সমাধান হতে পারে মানুষ যেভাবে অভস্থ সেভাবেই যদি মার্চেন্ট পেমেন্টকে রি-ডিজাইন করা যায় এবং এজেন্ট নাম্বার থেকে যদি মার্চেন্ট একাউন্ট এ পেমেন্ট করা যায় তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
এক্ষেত্রে আমরা সাধারণ ই-কমার্স ব্যাবসায়ি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিকাশ এর কাছে রিকোয়েস্ট করছি যাতে ই-কমার্স এর মত একটি উদীয়মান সেক্টর কে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এই প্রবলেম গুলির পার্মানেন্ট সমাধানে উদ্যোগী হন। এই সেক্টর অনেক বড় হবে তবে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের অনেক সাহায্যেরও দরকার হবে। আসুন সকলে মিলে বাংলাদেশের ই-কমার্স সেক্টরকে বিশ্বমানের সার্ভিস সেক্টর হিসেবে পরিচিত করাই।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে বিকাশ ই সবার গ্রহণযোগ্য কিন্তু সমস্যার পার্মানেন্ট সমাধান আমরাও আশা করছি।